জলপ্রপাতে ও শপিংমলে -6
জার্মানি থেকে যাত্রাপথে আমরা সুইজারল্যান্ডের কিছু অংশ ভ্রমন করে অষ্ট্রিয়ায় এক হোটেলে রাত্রিযাপন করি। উল্লেখযোগ্য ছিল রাইন ফলস ভ্রমন। একটা ফলস এত সুন্দর হয় তা না দেখলে বিশ্বাস হত না। সহযাত্রী যায়েদ ভাই পাকিস্তানী ফয়সাল ভাই এবং শ্রীলঙ্কান চন্দনা এর সাথে পাহাড় এর উপর থেকে সিড়ি ভেঙে নামতে লাগলাম যদিও পুরানো আমলের সিড়ি। আমরা সবাই ফলস এর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। বার বার ভিজে যাচ্ছিলাম। কেউ কেউ রেইন কোট পড়েছিলাম। সবাই ছবি তুলছিল, কেউ মোবাইল দিয়ে কেউ ক্যামেরা নিয়ে গিয়েছিল।
উত্তাল ঢেউ সমুদ্রের মত, এর মধ্যে ট্রলার নিয়ে ভ্রমন করছে। প্রচণ্ড ঢেউ। মাঝে মাঝে ফলস কে সমুদ্র বলে মনে হচ্ছিল। সবাই একজন আরেকজনের সাথে আনন্দ করে ছবি তুলছিলাম। মনে হচ্ছিল আনন্দধারা বহিছে সবার মনে। এর পাশে রয়েছে পার্ক। সুন্দর সুন্দর অসাধারন ফুলের গাছ। ফুলে ফুলে মোহিত চারপাশ। কোনটার নাম জানি না। পাশের পাকিস্তানী এবং শ্রীলঙ্কান ভদ্রলোকদের জিজ্ঞাসা করলাম তারাও জানে না। একটা ঘটনা ঘটলো যার রেশ প্রায় দশ বছর পরও মন নাড়া দেয়।
একটা ভেনেজুয়েলিয়ান বাচ্চা ৪/৫ বছর। মা, খালাদের সাথে বেড়াতে এসেছে সাউথ আমেরিকা থেকে। বাচ্চাটাকে দেখে মনে হলো আহা আমার যদি এরকম বাচ্চা থাকতো। তখনো বিয়ে করিনি বাচ্চা হবে কোথা থেকে। মনে মনে হাসলাম। বাচ্চার মাকে জিজ্ঞাসা করলাম- আপনারা কোথা থেকে এসেছেন? আপনার বাচ্চা খুবই সুইট। তারপর ছবি তুলতে চাইলাম। বলাতেই রাজি হয়ে গেল। ছবি তুললাম একটা শুধু বাচ্চা কোলে নিয়ে।
প্রায় দশ বছর পরে আমার মেয়ের বয়স যখন ৫ বছর তখন কোলে নিয়ে ছবি তুললাম। ছবি দেখে মনে হলো এই ছবিটা অনেক বছর আগে আমি দেখেছি। কাকতালীয় ঘটনা। সেই ভেনেজুয়েলিয়ান বাচ্চার সাথে আমার বাচ্চার অনেক মিল। অনেকে হয়তো বিশ্বাস করছেন না। আপনি চাইলে আমি দুটো ছবি দেখাতে পারি।
গ্রীষ্মকাল চলছিল। তাপমাত্রা ২৪-২৫°C। নেটিভ সুইসরা খুব কম জামা কাপড় পড়া। আমরা যারা বাংলাদেশ থেকে গেছি, অনেকের হাতে জ্যাকেট। নেটিভ সুইসরা জ্যাকেটের দিকে বার বার তাকাচ্ছিল।
একটা ফলস্-কে ঘিরে এত বড় আয়োজন বিশেষ করে পর্যটন প্রমোশন হতে পারে তা জানা ছিল না। কি নেই এখানে, ফলস ঘুরার জন্য নৌকা বিভিন্ন ধরনের। ফলস এর পাশে পাহাড়ের উপর সুন্দর মনোরম গুছানো পার্ক বাচ্চাদের খেলার জায়গা, অনেক স্যুভেনির শপ। একটা স্যুভেনির শপ এ ঢুকে কিছু কেনার চেষ্টা করলাম। বিদেশে গেলে যেটা হয় সব সময় মাথায় থাকে মানি এক্সচেঞ্জ রেট। যদি ১০ সুইস ফ্রাঙ্ক হয় তাহলে বাংলাদেশি টাকায় কত হয়। এই চিন্তা হয়। সস্তা না বেশি দামি। তারপরও বেশ কিছু জিনিস কিনলাম।
চাবির রিং থেকে শুরু করে ভিউ-কার্ড পর্যন্ত। এটা মনে হল এটা কেনা কাটা নয়- এটা যেন সুন্দর ফলস এবং সুন্দর দেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো, যদিও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে রইল শুধুমাত্র এই জায়গার জন্য নয় প্রতিটা শহর, জায়গা ভ্রমন করেছি সুইজারল্যান্ডে যেন কখনো ভুলতে পারব না, ভালোবাসা থাকবে। যেই সব সুইস নেটিভদের সাথে ঘুরেছি এত আন্তরিকতা আর কখনো দেখি নি অন্য কোন দেশে, অনেকে ইংলিশ বলতে পারে না তবুও ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাষায় কথায়, এটিচিউডে আন্তরিকতার ছোয়া সব সময় বুঝা যায়। গিফট শপ দোকান থেকে সুইস ছুরি কিনতে চেয়েছিলাম, ভাবলাম যদি বিমানবন্দরে সমস্যা হয়। এখনো আফসোস হয় মেইন লাগেজে নিয়ে আসতে পারতাম। ম্যাকগাইভার টিভি সিরিয়াল দেখে দেখে সুইস ছুরির প্রতি সব সময় দুর্বলতা ছিল। স্বপ্নের নায়কের সবকিছুর জন্য স্বপ্নের আধেয়র মত।
Comments
Post a Comment