বাস ভ্রমন জার্মান টু অষ্ট্রিয়া -5

বাস ভ্রমন যে কত আনন্দদায়ক হয় তা এই বাস ভ্রমন না করলে হয়তো কোনদিন জানতে পারতাম না। চল্লিশ সিটের বাস এবং সবার মধ্যে বাংলায় কথাবার্তা চলছে। মাঝে মাঝে বাইরের দৃশ্য দেখে ওয়াও, মাইগড ইংলিশ শব্দে এক্সপ্রেশন হচ্ছিল। জানি না বাংলার এক্সপ্রেশনগুলো মনে হয় বাসের সবার মনে পরছিল না। আমরা অনেক পাহাড়, উপত্যকা পেড়িয়ে যাচ্ছি। জানি না প্রত্যেকটা জায়গার নামও ভালো করে, শুধু জানি জার্মানি থেকে অষ্ট্রিয়া যাচ্ছি। মাঝে মাঝে দেখছি পাহাড় ঘেড়া গ্রাম, এত সবুজ যেন মনে হচ্ছিল তুলির আঁচড়ে কেউ ছবি একেছে। ভাবলাম জার্মান-অষ্ট্রিয়া যদি এত সুন্দর হয় তাহলে সুইজারল্যান্ড যেন কেমন হবে। সহযাত্রী যায়েদ ভাই বললো “মনে হচ্ছে স্বর্গে ঢুকে যাচ্ছি ভূল করে”। কবির কবিতার কথা মনে হল স্বর্গ নরকের পক্তির কথা, স্বর্গ নরকের কিছু উদাহরন মনে হচ্ছে পৃথিবীতে আছে। এই ভ্রমনের পর অনেক দেশে ভ্রমন করার সুযোগ হয়েছে কিন্তু কখনো এ রকম বাস ভ্রমন হয়নি। হয়তো প্রথম দেখা সৌন্দর্য এর একটা প্রভাব থাকে যা অন্য সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেয়। অনেকটা প্রথম প্রেমের মত। বিভিন্ন ফুলের গাছ, কেউ বলছে রডড্রেনড্রেন, কেউ বলছে বেলী, কাঠ বেলী। বিভিন্ন ফুলের গাছের সমারোহ যাবার পথের সবুজ পাহাড়ে যেন আকাশ চুমু খেয়ে যাচ্ছে অনন্তকাল ধরে। অসংখ্য গাছ। ছোট ছোট শহর ছাড়া মানুষজন নেই বললেই চলে। আমাদের মধ্যে কয়েকজন অনেকবার এই রাস্তায় ট্রাভেল করেছে বার বার দেখেও তাদেরও মুগ্ধতা কমেনি বরং বেড়েছে। আমার প্রিয় লেখকদের কথা মনে হচ্ছিল। সুনীল গঙ্গোপদ্যায়ের, বুদ্ধদেব গুহের কথা মনে পড়ে। কত সুন্দর করে জঙ্গল, পাহাড়, নদীর কথা বর্ণনা দিয়েছেন, কত সাধারন জায়গায় আর এরকম জায়গা নিশ্চয়ই অন্যরকম ভালো ভাবে বর্ণনা করতেন। হেডফোনে গান শুনছিলাম অনেকক্ষণ ধরে হিন্দি গান। কিন্তু মনে হচ্ছিল এই বাইরের দৃশ্যের সাথে শুধুমাত্র রবীন্দ্রসঙ্গীত যায় আর কিছু না। কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলাম। মনটা উদাশ হয়ে গেল কেমন যেন। ছোট নদী দেখলাম কোথাও প্রস্থ ৩০ ফিটের বেশি হবে না কিন্তু এত স্বচ্ছ মনে হয় নদীর তলা পর্যন্ত দেখা যাবে। এই সেই বিখ্যাত নদী যা কিনা জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং সুইজারল্যান্ড শেয়ার করেছে। একজন বললো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় কেমিক্যাল কোম্পানি BASF, CIBA, BAYER সবই এই নদীর পাশে কিন্তু দূষণ নেই বললেই চলে। বারবার শুনছিলাম এবারের ভ্রমনের গান। প্রতিটি ভ্রমনের সঙ্গী থাকে গান, অনেকদিন পরে শুনলে মনে হবে এই ভ্রমনের কথা। মনে হচ্ছিল ছোট ছোট গ্রাম, লেকের পাশে বাস করা লোকগুলো হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী। প্রকৃতি অকৃত্তিম ভাবে আঁচল ভরে সৌন্দর্য সপেছে মানুষের তরে।

Comments

Popular Posts