অষ্ট্রিয়ায় একদিন -8
১ম দিন অষ্ট্রিয়াতে যখন বিকেল বেলা পৌছালাম, তখন একটা ডিনার এর নিমন্ত্রনে গেলাম, যদিও বিকেল ৫টা থেকে ৬টার সময়। অস্ট্রিয়ান ট্র্যাডিশনাল বাফেট। এত আন্তরিকভাবে বাফেট কেউ হয়তো কোন রেষ্টুরেন্টে সার্ভ করে নি। কয়েকজন অস্ট্রিয়ান ভদ্রমহিলা অনেক আইটেম রান্না করে নিয়ে এসেছে এবং বাকি স্টিকগুলো এখানে তৈরি করা হয়েছে। জীবনের প্রথম ভেনিসন খাচ্ছি, টেস্টটা কেমন? ভাল তবে খুব অস্বাভাবিক কিছু না। যারা জানেন না তাদের জন্য বলছি, এটা বাছুরের মাংস। যারা খাবার প্রস্তুত করেছে তাদের সম্বন্ধে জানলাম। তারা আসলে পার্টটাইম খাদ্য সরবরাহকারী। যখনি অর্ডার হয় ঐ গ্রামে তখন তারা বাসায় খাবার তৈরি করে নিয়ে আসেন। কিন্তু খুব প্রফেশনাল, খুব আন্তরিক। কয়েকজনের সাথে কথা হল অস্ট্রিয়ান গ্রাম নিয়ে – তারা থাকতে পারছে না কারন একটা কমিউনিটি চালাতে হলে যা লাগে তা এখানে পর্যাপ্ত পরিমানে নেই। তাই অন্য গ্রামে চলে যাচ্ছে। একটা স্কুলে যদি পর্যাপ্ত বাচ্চা না থাকে, তবে কিভাবে স্কুল চলবে তেমনি দোকানে কাস্টমার না থাকলে গ্রামের মার্কেটগুলো কিভাবে চলবে। আমরা যারা গিয়েছিলাম তারা সবাই মিশে গল্প করতে করতে খুব আন্তরিক হয়ে গিয়েছিলাম। কত গল্প কত বিষয়ে নিজের দেশের সাথে এই দেশের তুলনা। মাতৃভূমির সাথে কোন তুলনা নাই কিন্তু কিছু বিষয় আছে যেগুলো আমরা একটু সচেতন হলে সুইজারল্যান্ড না হোক আমাদের দেশ নিজের মত করে সুন্দর হয়ে উঠবে। একটা অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রাস্তা ঘাটে সমস্ত জায়গায় আমরা ময়লা ফেলি, খাবার পর প্যাকেট, প্লাস্টিক, বোতল ছুড়ে ফেলে দেই। অথচ সুইজারল্যান্ডে কোথাও এ ধরনের ময়লা পাওয়া যাবে না। দেশপ্রেম শুধু ক্রিকেট খেলায় না দেখিয়ে সমস্ত ক্ষেত্রে দেখানো উচিৎ। রাস্তা ঘাটে ময়লা না ফেলে বেশী বেশী গাছ রুপন করে দেশকে আরো সুন্দর করে ফেলি। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় হঠাৎ ডিনারের মাঝে সবার কাছে সবার নামে একটা করে খাম। খাম খুলতেই ১০০ ইউরো সবাইকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে শপিং করার জন্য। যদিও ১০০ ইউরো খুব বেশি না কিন্তু তারপরও। নিতে চাছিলাম না যদিও। জায়গাটা এতো নিঃশব্দ ছিলো-শান্ত, পাশে হ্রদ, গাছপালা। মনে হচ্ছিল সত্যিকারের বনভোজন হচ্ছিল। সন্ধ্যা হওয়ার পর সবাইকে ভিতরে বসতে বলা হচ্ছিল। এটা ফ্যাক্টরির ওয়ারহাউসের মত ছিল। জানি না হয়তো বন্য প্রানির ভয় আছে। যদিও অনুমান করছি, এরকম বন যখন বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকার আশে পাশে ছিল শুনেছি মেছোবাঘ সহ অনেক কিছু দেখা যেত। সন্ধ্যা হলে একটু শীত শীত লাগে, আবার দিনের বেলায় কিন্তু গরম। যদিও তখনও পৃথিবীর ক্লাইমেট চেঞ্জ এর ধারনা সবার কাছে পরিষ্কার ছিল না। আবার এইসব দেশগুলো তখনও কোনটাই এসি ব্যবহার করতো না এমনকি হোটেলেও। নতুন করে নেয়া সিচুয়েশন এডজাস্ট করতে সময় লাগে মানুষের। সূর্য ডুবলে দূরের পাহাড়ে তখনো বরফ জমা দেখা যাচ্ছিল যদিও খুব বেশি কিছু না।
Comments
Post a Comment